একজন চাকরি প্রার্থীর জন্য রেজ্যুম অনেক টা পাসপোর্ট এর মতো। আপনার দক্ষতা /যোগ্যতা যতই থাকুক না কেন, তা যদি যথাযথ প্রদর্শন করতে না পারেন তো কাজ পাবেন না। এজন্য আপনাকে জানতে হবে কিভাবে আপনার কাজের দক্ষতা/ যোগ্যতা আপনি অপর একজনের সামনে তুলে ধরবেন? অবশ্যই তা সিভি র মাধ্যমে। এখানে একটা পার্থক্য আছে সিভি এবং রেজ্যুম এর মধ্যে।
আপনার জীবনের শিক্ষাগত, ব্যক্তিগত এবং কর্মক্ষেত্রের যা যা অর্জন সব কিছুই বিস্তারিত আকারে সিভি তে থাকে। এজন্য সিভি র আকার বেশ লম্বা হয়ে যায়। যখন কোন প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়, সেই প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র তাদের প্রয়োজন কে প্রাধান্য দিয়ে সিভি কে কেটে ছেটে ছোট করে যে ফরম্যাট দাঁড় করাতে হয় তাই মূলত রেজ্যুম।
যখন একজন চাকরি প্রার্থী কোন জব অ্যাড. এর জবাবে লেটার লিখবেন সেটা হবে আপনার ব্যক্তি, কর্ম এবং অভিজ্ঞতার একটা প্রতিচ্ছবি। হাজার হাজার আবেদন থেকে শর্টলিস্টেট হয়ে যেন ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পান, এজন্য আপনাকে একটা সংক্ষিপ্ত, তথ্যবহুল, সাবলীল ও পরিচ্ছন্ন একটা সিভি বানাতে হবে।
সিভির শুরুটাই এমন হতে হবে যেন, কর্মকর্তার চিঠির উত্তরে আপনি আপনার নিজের যোগ্যতা তুলে ধরছেন। প্রথমে একটা ছোট্ট প্যারা করে সেখানে আপনার কাজের অভিজ্ঞতার একটা ছোট্ট সারসংক্ষেপ তুলে ধরবেন। “আগ্রহী”, “আশাবাদী” এই শব্দ গুলোর পরিবর্তে কি কি করেছেন তা উল্লেখ করবেন। আর যদি ফ্রেশার হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের আগ্রহের কথাটাই যতটা সম্ভব সুন্দর করে উপস্থাপন করবেন।
ব্যাক্তিগত তথ্য: ব্যাক্তিগত তথ্যতে আপনার নাম, ঠিকানা (বর্তমান ঠিকানা), সচল ফোন নাম্বার, সোশ্যাল মিডিয়ার লিংক, পোর্টফলিও'র লিংক (যদি থেকে থাকে) এসব উল্লেখ করবেন। সব কিছুই সঠিক এবং আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হতে হবে। এক্ষেত্রে ফেসবুকের পোশাকি নাম দেয়া ঠিক শোভনীয় নয়। এজন্য আপনার সিভি টা ডিস্কোয়ালিফাই হতে পারে।
ছবি: ফর্মাল লুকের সমসাময়িক ছবি দেওয়া উচিত। যেন আপনার বর্তমান চেহারার সাথে শতভাগ মিল থাকে। ছবি স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি চওড়া হাসি, আকর্ষণীয় ভংগিমা বা ফেসবুক প্রোফাইলে ব্যবহার করা কোন ছবি দেওয়া ঠিক না। এতে আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা হতে পারে।
কাজের অভিজ্ঞতা: আপনার পরিচয় পাওয়ার পর আপনি কি করছেন? বা কি কি কাজের অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আপনার আছে এ বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবে। তাই বর্তমানে আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে কি পদে কর্মরত আছেন তা উল্লেখ করুন। কতদিন থেকে কাজ করছেন সে বিষয় টা স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। এই প্রতিষ্ঠানে আপনি এমন উল্লেখযোগ্য কি কাজ করেছেন, যার জন্য আপনাকে তাদের প্রয়োজনীয় মানুষ মনে হবে,সে বিষয় গুলো একে একে তুলে ধরুন। “পরিশ্রমী”, “আশাবাদী”, “প্রত্যাশী” এই শব্দ গুলো পরিহার করে আপনার সফলতা শব্দে বা শতাংশে প্রকাশ করুন। এতে আপনার সিভি'র গুরুত্ব বাড়বে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা : যদি ফ্রেশার হয়ে থাকেন, তাহলে শিক্ষাগত যোগ্যতা আগে তুলে ধরুন। সব শেষে যে ডিগ্রি অর্জন করেছেন, সেটা সবার আগে উল্লেখ করুন। আর সর্বপ্রথম টা সব শেষে। কোন পরীক্ষার ফলাফল উল্লেখযোগ্য ভালো হলে তা উল্লেখ করতে পারেন।
অন্যান্য দক্ষতা: অ্যাকাডেমি পড়াশুনা ছাড়াও, অন্য যে কাজ গুলো আপনি শিখেছেন এবং সার্টিফিকেট নিয়েছেন তা উল্লেখ করতে পারেন।
রেফারেন্স এর ব্যবহার : রেফারেন্স উল্লেখ করুন এমন ব্যাক্তির যিনি আপনাকে চেনেন। আপনার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন। আপনার কর্মস্থলের উর্ধতন কর্মকর্তা এবং আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এমন ব্যক্তিদের রেফারেন্সে রাখুন। দু'জন মানুষের রেফারেন্স দেওয়াই যথেষ্ট। যাদের রেফারেন্স দিচ্ছেন, তাদের অনুমতি নিয়ে দিবেন। তাদের যোগাযোগ মাধ্যম গুলো যেন সক্রিয় হয়,এমন নম্বর, ঠিকানা ও ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করুন। যেন তাদের সাথে যোগাযোগ করলে খুব সহজেই কর্মকর্তা রা আপনার সম্পর্কে জানতে পারেন। এমন কাউকে রেফারেন্সে রাখা ঠিক নয়, যারা আপনাকে ঠিক মতো চেনেই না বা একদমই চেনে না। এতে করে যারা আপনাকে নির্বাচিত করবে বলে ভাবছেন তাদের অনাস্থা তৈরি হবে।
যে ভুল গুলো করবেন না :
সর্বোপরি নিজের কাজের বিষয়ে সর্বোচ্চ ধারণা রাখুন। সমসাময়িক বিশ্বে আপনার কাজের গুরুত্ব কতখানি সে বিষয়ে পূর্ণ ধারণা রাখুন,যেন আপনার আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি না পড়ে।
Views 516 times