ইন্টারভিউতে যে প্রশ্নের উত্তর দিলে চাকরি সুনিশ্চিত, অথচ অনেকেই ভূল করে

ইন্টারভিউ বোর্ড যখন ফেস করতে যাবেন, তখন কি কি প্রিপারেশন নেওয়া জরুরি? এটা একটা সাধারণ দুঃশ্চিন্তার বিষয় যা সব চাকরি প্রার্থীর মাথায় চলতে থাকে।

বাংলাদেশে চাকরির ইন্টারভিউতে সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট ধরনের প্রশ্ন করা হয়। এই প্রশ্নগুলো আপনার জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক মূল্যায়ন করার জন্য করা হয়। তবে  বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে, যেগুলোর উত্তর যদি আপনি সঠিক ভাবে দিতে পারেন তবে চাকরি পাবার দৌড়ে আপনি অবশ্যই এগিয়ে যাবেন।

আজকে আমরা সেই প্রশ্ন ও উত্তর গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।

 

১. নিজের সম্পর্কে বলুন?/ আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন

প্রশ্নের কারনঃ এই প্রশ্নের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার আপনার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত স্পষ্ট ধারণা পেতে চান।

আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন তা ভেবে নিন। আমাদের পরামর্শ থাকবে উত্তর টা প্রফেশনালি দেবেন। সেটা কেমন?

যেমন ধরুন – প্রথমেই আপনার নাম, বাড়ি কোন জেলায়, কোথায় পড়াশুনা করেছেন, এখন কি করছেন। এই বিষয় গুলো র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন। পারিবারিক পরিচয় এর বিস্তারিত বিবরণ এখানে প্রয়োজন নেই । যদি কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন, তাহলে তাও উল্লেখ করুন পদবি সহকারে।  কতদিন যাবত কাজ করছেন সেটাও উল্লেখ করবেন। এতে করে আপনার স্বচ্ছতা প্রকাশ পাবে।

 

২.  আপনি কি কি কাজ জানেন? /আপনার কাজের অভিজ্ঞতা বলুন। /আপনার কি কি দক্ষতা আছে?

প্রশ্নের কারনঃ এই প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার কাজ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়ে থাকে ।

যদি প্রফেশনাল হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও অভিজ্ঞতা গুলো বলবেন। পোস্টে র সাথে সম্পর্কযুক্ত কাজ গুলো উল্লেখ করতে ভুলবেন না। ডিজিটাল পোর্টফলিও থাকলে তার লিংক সম্পর্কে অবগত করুন।

আর যদি নতুন হয়ে থাকেন তাহলেও নিজের ছোট খাটো যে কোন কাজের অভিজ্ঞতা যা পোস্টের সাথে সম্পর্কিত তা তুলে ধরুন। যেমন-

“আমি ছাত্র অবস্থা থেকেই যেহেতু মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করেছি, তাই মানুষের সাথে কথা বলে তাদের সমস্যা বুঝতে পারি বা তারা ঠিক কি ধরনের সমাধান চাইছেন তা বুঝতে পারি। এছাড়াও অনেক সময় এমন হয়েছে আমাকে পরীক্ষার সময় পর্যাপ্ত ছুটি পাই নাই, তখন কাজ ও পড়াশোনা দুই রকম চাপ সামলাতে হয়েছে। এসময় গুলো আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল, আমি ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে পেরেছি।

এছাড়াও পড়াশোনার কাজে যে প্রেজেন্টেশন বানাতে হতো, তা আমি নিজেই করতাম। পাওয়া পয়েন্ট, এক্সেল, মাইক্রোসফট, ভিডিও এডিটিং এর বেসিক কিছু  কাজ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে”।

 

. আপনি কেন এই পদে নিজেকে যোগ্য মনে করেন?

প্রশ্নের কারনঃ এই প্রশ্নের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার জানতে চান যে, আপনি কেন এই কাজের জন্য আদর্শ প্রার্থী।

উত্তর ধারণা: আপনার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাগুলোকে এই কাজের প্রয়োজনীয়তাগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখান। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বলতে পারেন, "আমি এই পদে আবেদন করেছি কারণ আমার [আপনার দক্ষতা] দক্ষতা এই কাজের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আমার [আপনার অভিজ্ঞতা] ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা আমাকে এই কাজের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।"

 

৪. আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?/ আগামী ৫/১০ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে  চান?

প্রশ্নের কারনঃ এই প্রশ্নের মাধ্যমে দূরদর্শিতা যাচাই করা হয়।নিজের পরিকল্পনা বা ইচ্ছার কথাই প্রকাশ করুন, অবশ্যই অত্যন্ত বিনয়ী ভাবে।যেমন- 

“মার্কেটিং সেক্টরে কাজ করেছি, আরও অনেক কাজ শেখার ইচ্ছে আছে। আগামী ৫/৬ বছর পর যেন নিজেকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেন আমার কর্মক্ষেত্রে আমি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হই এবং উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হতে পারি”।

এমন কোন কথা বলা উচিত না যার ফলে  আপনাকে বারবার পরখ করে দেখতে চাইবে। ওভার কনফিডেন্স এর সাথে কথা বললে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য বলা হয়, “কনফিডেন্স ভালো, ওভার কনফিডেন্স ভালো নয়”।

 

৫.আমাদের কোম্পানি  সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন ?

 প্রশ্নের কারনঃ আপনি এই কোম্পানি তে চাকুরী করার জন্য কতটা আগ্রহী তা জানার চেষ্টা করা হয়

এটি খুব গূরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, প্রায় সময় দেখা যায় কেউ ইন্টারভিউ বোর্ডে যান, তিনি যেই কোম্পানির জবের জন্য বা পোস্টের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তা সম্পর্কে ঠিক জানেন না। এই বিষয়টা একজন ক্যান্ডিডেট এর জব পাবার সম্ভাবনা কে অনেকখানি কমিয়ে দেয়। তাই অবশ্যই যেই কোম্পানি তে আপনি জবের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন, সেই কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন। যেমন- কোম্পানি কি নিয়ে কাজ করে, যাত্রা কবে থেকে শুরু হয়, ইত্যাদি।

 

৬. যে পোস্টের জন্য নিয়োগ দিচ্ছেন, সেই পোস্ট সম্পর্কে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনি জানেন কি না ?

 প্রশ্নের কারনঃ আপনার বিচক্ষণতা জানার চেষ্টা করা হয়

এ বিষয়ে যাচাই বাছাই মূলক প্রশ্ন করতে পারে। তাই সার্কুলার খুব ভালো মতো পড়বেন এবং যে বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে হিবে সেগুলো গুগল করে আরও বিস্তারিত জেনে নেবেন। বিশেষ করে, জব ডেস্ক্রিপশনে দেওয়া কাজ গুলো সম্পর্কে আপনার সঠিক ধারণা থাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

৭. আপনি স্যালারী কত চান? 

প্রশ্নের কারনঃ আপনার অবস্থান ও দক্ষতা সম্পর্কে আপনি কতটা অবগত আছেন তা জানার চেষ্টা করা হয় ।

আপনি যে পদবীর জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সেই পদে একটা স্যান্ডার্ড স্যালারি রেঞ্জ অনুযায়ী যা হতে পারে সেটাই উল্লেখ করুন। আপনি নিজে তো নিজের অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছেন, সেই বিবেচনায় একটা ফেয়ার অ্যামাউন্ট বলবেন। অনেক ক্ষেত্রে স্যালারি জব সার্কুলারে দেওয়া থাকে, তাই সেই ক্ষেত্রে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার স্যালারি সম্পর্কে। তবে আপনি যদি একজন ফ্রেশার হোন তবে স্যালারি থেকে জব পাবার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

 

৮. আপনার দূর্বলতা গুলো কি কি?  

প্রশ্নের কারনঃ এই প্রশ্নের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার আপনার স্ব-সচেতনতা এবং আত্মবিশ্লেষণের ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতে চান।

পরীক্ষার্থীকে যাচাই করার জন্য এই প্রশ্ন অনেকটা গলা পানিতে নেমে যাওয়ার মতো। এতক্ষণ আপনি বিচক্ষণতার সাথে সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন, কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে পিছিয়ে ফেলতে পারে।

“আমি খুব বদমেজাজি, “অল্পতেই মানুষকে বিশ্বাস করি, “মিথ্যা বলা একদম পছন্দ করি না, “ সহজে কারও সাথে মিশতে পারি না” এই রকম সরল স্বীকারোক্তি না দিয়ে কাজের ক্ষেত্রে দূর্বলতা কি আর কিভাবে সেটা কাটিয়ে উঠবেন তা ভেবে বলুন, যেমন -

“আমাকে কোন কাজ দিলে তা পুরোপুরি ভালো ভাবে শেষ করার জন্য অনেক ভাবে যাচাই বাছাই করি। এরজন্য এক প্রশ্ন বারবার করে ফেলি বা একই বিষয়ে অনেকের মতামত নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করলেও দেখা যায় একটু বেশি প্যানিক নিয়ে ফেলি। এটা আমার দূর্বলতা মনে হয় আমার কাছে”।

অথবা বলতে পারেন "আমি কখনো কখনো খুব বেশি কাজের চাপে পড়ে যাই। তবে আমি এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন করার চেষ্টা করছি।"

প্রশ্ন কর্তা আসলে বুঝতে চান, আপনি আপনার নিজেকে কতটা জানেন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

 

৯. যদি তাৎক্ষণিক সিধান্ত নিতে বলা হয় কোম্পানির ক্ষেত্রে, তখন কি করবেন?

প্রশ্নের কারনঃ এই প্রশ্নের মাধ্যমে ইন্টারভিউয়ার আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা সম্পর্কে জানতে চাই

এই প্রশ্নের উত্তর ব্যক্তি বিশেষে আলাদা আলাদা হবে। তাই নিজের মতো যা ভালো মনে হবে সেটাই বলবেন। কোম্পানির স্বার্থে আপনি যে কোন ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবেন না, এই বিষয় টা উত্তরে পরিষ্কার রাখবেন ।

 

এধরনের প্রশ্ন বাদেও সাধারনত আরো কিছু প্রশ্ন করতে দেখা যায় তার কিছু উদাহরন নীচে দেয়া হলোঃ

  • কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত প্রশ্ন
  • আপনার পূর্ববর্তী চাকরিতে আপনার সবচেয়ে বড় সাফল্য কী ছিল?
  • আপনার পূর্ববর্তী চাকরিতে আপনার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী ছিল এবং আপনি তা থেকে কী শিখেছেন?

 

ইন্টারভিউ বোর্ডে আরেকটা বিষয় চাযাই করা হয়, তাহল ক্যান্ডিডেড এর ইংলিশ প্রফিসিয়েন্সি। আপনি ইংলিশ শুনতে, বলতে কতটা পারদর্শী এর একটা ছোট টেস্ট নিতেই পারেন ইন্টারভিউ বোর্ড। তাই প্রশ্ন গুলো  ইংলিশে করলে অস্বাভাবিক হবে না। বরং নিজেকে সেই ভাবেই প্রস্তুত করুন।

সবশেষে মনে রাখবেন, কোম্পানি সব সময় গুরুত্ব দেয় এমন জনবলের প্রতি যারা সময় বাঁচায়, ব্যয় কমায়, সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং  নতুন নতুন সমসাময়িক চিন্তা ভাবনা র সাথে কাজের সামঞ্জস্য আনতে পারে। নিজের মধ্যে এই বিষয় গুলোর গ্রুমিং করুন এবং কনফিডেন্ট থাকুন কাজ ও কথার বিষয়ে। কথা বলার সময় শব্দের বাছাই এর ক্ষেত্রে মনোযোগ দিন, এই বিষয় গুলো ই আপনাকে সামনের সারির দিকে এগিয়ে দিবে।

অলওয়েজ বি পজিটিভ

Views 291 times