অভিজ্ঞতা ছাড়া সিভি কেমন হওয়া উচিৎ?

আপনি তো সদ্য অনার্স পাশ করেছেন। এর আগে কোথাও জব তো দূর, সিভি -ই তো বানাচ্ছেন নতুন। তাহলে আপনি কোথায় পাবেন অভিজ্ঞতা??  তাহলে কি চাকরির বাজারে আপনার কোন জায়গা নেই?

পিছিয়ে আছেন সবার থেকে???

অস্থির হবেন না।অবশ্যই আপনার সিভি এবং আপনি, চাকরি পাবার যোগ্য। শুধুমাত্র সিভিতে কিভাবে নিজেকে তুলে ধরবেন সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। চাকরি র বাজারে প্রতিযোগিতা র শুরু এখানেই।  

কাজ করেননি বা অভিজ্ঞতা নেই বলে ভয় পাবেন না। আপনার যে অভিজ্ঞতা নেই এজন্যই আপনাকে দরকার। কারণ, কোম্পানি তে যারা কাজ করছেন তারা বেশ খানিকটা অভিজ্ঞতা নিয়ে ওপরে উঠে গেছেন। নিচের পদগুলো শূন্য। এই শূন্য পদ গুলো ভরাতে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা শূন্য কিন্তু আগ্রহী ও পরিশ্রমী মানুষ প্রয়োজন, যারা কাজ শিখতে আগ্রহী। তাই আপনার কাজ করতে আগ্রহী মনোভাবটাকে সিভিতে প্রকাশ করুন। সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী উপস্থাপন খুব প্রয়োজন। 

আগে সাধারণত একটা কমন সিভি রেডি করতো সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করা ছাত্ররা, সব কোম্পানিতে সেই একই সিভি ড্রপ করতো। এখন এটাকে পুরনো রীতি বলা হয়। কারন প্রাতিষ্ঠান ভেদে কাজের ধরন ভিন্ন, তাই একই ধরনের CV প্রতিটা কোম্পানির জন্য প্রয়োজন না । এ জন্য প্রতিটা কোম্পানির চাহিদা মোতাবেক আলাদা আলাদা সিভি বানাতে হবে।   

একজন ফ্রেশের হিসাবে CV বানানর সময় নিচে উল্লেখিত বিষয় গুলো অনুসরণ করুন :

·        প্রথমে ৩/৪ লাইনের একটা ছোট্ট প্যারা রাখুন। সেখানে  আপনার নিজের সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়ে কথা বলা শুরু করবেন। আপনার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং নতুন কাজ শেখার আগ্রহ আলোচনা করুন খুব অল্প কথায়।

·        কোম্পানির বিজ্ঞপ্তি ভালো করে পড়ুন। কর্তৃপক্ষ কি কি চায় তা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করুন। সেগুলোর একটা লিস্ট তৈরি করুন। এরপর, আপনি তাদের চাহিদা অনুযায়ী কি কি করতে পারেন তা ভেবে বের করুন। হয়তো কোনটা আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ছিল। কোন একটা স্কীল আপনার এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস আছে। এই বিষয় গুলো একটা একটা করে খুঁজে বের করুন নিজের ভেতর থেকে। সেগুলোর তালিকা তৈরি করুন। এরপর সিভি বানানোর সময় জায়গা বুঝে নিজের দক্ষতা এবং গুণগুলো তুলে ধরুন।

চলুন আরেকটু বোঝার চেষ্টা করি  

ছাত্র থাকাকালীন সময়ে যদি কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকেন, কোন স্কীল ডেভেলপমেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন, জব ফেয়ারে বা সায়েন্স ফেয়ারে অংশ নিয়েছেন বা টিউশনি করিয়েছেন বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করেছেন।  যখন যে কাজ করেছেন সেগুলোই আপনার দক্ষতা। এর ফলে আপনি টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখেছেন। পড়াশোনার বাইরে আরও অন্য কাজ শেখা হয়েছে। মানুষের সাথে কথা বলতে শিখেছেন। আপনার বানানো নতুন কোন বিষয় সবার সামনে তুলে ধরেছেন। বাজেট বানাতে শিখেছেন। এই বিষয় গুলো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবে পয়েন্ট আকারে তুলে ধরুন।

সফট এন্ড হার্ড স্কীল: কোম্পানির কাজে সফট এবং হার্ড স্কীল দুই রকমের কাজেরই প্রয়োজন থাকে। হার্ড স্কীল অর্জন করতে বেশ একটা সময় দরকার। দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে হার্ড স্কীল রপ্ত হয়। অন্যদিকে সফট স্কীল মানুষের আচরণগত গুণ। যেমন : আপনি অন্যের কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারেন। খুব দ্রুত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন যে কোন বিষয়। কেউ কোন সমস্যা  নিয়ে কথা বললে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা ধরে ফেলতে পারেন এবং সমাধান ও বের করে দিতে পারেন। টিম ম্যানেজমেন্টে ভালো দক্ষতা আছে আপনার। লিডারশীপ এর কাজ করেছেন ভার্সিটিতে। এগুলো আপনার সফট স্কীল, যা সবার মাঝে থাকে না। আবার অভিজ্ঞতা থেকেও অর্জন হয় না। এই গুণ গুলো যদি আপনার মাঝে কোনটা থেকে থাকে, তাহলে সেটাও সুন্দর করে সিভিতে উপস্থাপন করুন। নতুনদের মাঝে এই গুণ গুলো থাকলে কর্তৃপক্ষের আগ্রহ অনেক সময় বেড়ে যায় কাজে নেয়ার জন্য।

এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস: এরপর এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসে যদি আরও কোন কাজ শিখে থাকেন, যেগুলোর সার্টিফিকেট আছে সেগুলো উল্লেখ করুন। বিশেষ কোন কাজের কৃতিত্ব  থাকলে সেটাও উপস্থাপন করুন। কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে যদি উল্লেখযোগ্য অবস্থান পেয়ে থাকেন, সেটা জানাতে ভুলবেন না।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: পড়াশোনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেবেন। সবার শেষ ডিগ্রি সবার আগে তুলে ধরবেন। সব প্রথম ডিগ্রি সবার শেষে। যেমন- অনার্স বা মাস্টার্স দিয়ে শুরু করবেন, সবার শেষে এস.এস.সি  দেবেন। রেজাল্ট এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ তুলে ধরবেন।

শখ বা আগ্রহ : আপনার শখ কি? কি কাজ করতে ভালো লাগে? সে বিষয় গুলো সিভিতে রাখবেন, তবে একটু বুদ্ধি করে। যেমন- আপনি হয়তো কোন সময় মাইক্রোসফট, এক্সেল এর কাজ শিখেছেন। প্রেজেন্টেশন বানানোর সময় পাওয়ার পয়েন্টের কাজ শিখেছেন। আপনি যখন একটা কোম্পানির অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেকশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে অ্যাপ্লাই করছেন, তখন এই নিজের আগ্রহে শিখে আসা বিষয় গুলো বেশি প্রাধান্য পাবে নাচ, গান বা অভিনয়ের শখের থেকে। তাই শখের জায়গায় সৌখিন নয় কৌশলি হয়ে কাজ উপস্থাপন করুন জায়গা বুঝে। 

ভাষাগত দক্ষতা : কোন কোন ভাষায় কথা বলতে পারেন সেটাও সিভিতে প্রকাশ করা জরুরি। যে ভাষা লিখতে ও বলতে পারেন,তার পাশে লিখবেন ভার্বাল এন্ড রিটেন। যদি যে কোন একটা পারেন তো শুধু সেটাই লিখবেন। মাতৃভাষার ক্ষেত্রে লিখবেন নেটিভ। তবে হিন্দি বা উর্দু আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য। অফিশিয়াল ব্যবহার এখানো নেই। এজন্য এই ভাষা দুটির বলতে পারার দক্ষতা সিভিতে জরুরি নয়।

পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ঠিকানা: এরপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন। নিজের নাম, বাবা মা এর নাম, ঠিকানা। নামের ক্ষেত্রে নিজের এবং বাবা মা এর কারো নামেরই ডাকনাম দেবেন না। ঠিকানা বর্তমান এবং স্থায়ী দুই ঠিকানাই উল্লেখ করবেন যেন আপনার সাথে যোগাযোগ সহজেই করা সম্ভব হয়। ফোন নাম্বার যেটা সচল এবং হোয়াইট অ্যাপ আছে এমন নাম্বার দেবেন। প্রয়োজনে অভিভাবকের নাম্বারও উল্লেখ করে দিন। মাথায় রাখবেন আপনার কাজ দরকার, তাদের আপনাকে দরকার নয়। তাই যোগাযোগের বিষয়ে আপনাকে এগিয়ে থাকতে হবে।   

সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাড্রেস বা লিংক দিবেন। ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিকস ইত্যাদি ডিজিটাল প্লাটফর্মের কোন কাজের পোর্টফলিও থাকলে অবশ্যই তা তুলে ধরুন এবং লিংক দিয়ে দিন। তবে ডিজিটাল মিডিয়ার লিংকে কখনোই পোশাকি নাম ও অতরিঞ্জত ছবি  ব্যবহার করবেন না (যেগুলো আপনি সিভি তে উল্লেখ করবেন)।

রেফারেন্স : নতুনদের ক্ষেত্রেও রেফারেন্স গুরুত্ব রাখে। আপনারা ভার্সিটির দুজন শিক্ষককে রেফারেন্সে রাখবেন। যাঁরা আপনাকে চেনে, আপনার বিষয়ে তথ্য দিতে পারবে এমন দুজন শিক্ষককের অনুমতি নিয়ে তাঁদের রেফারেন্সে রাখবেন। একজন আপনার নিজের ডিপার্টমেন্ট শিক্ষক অন্যজন অন্য ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক কে রাখুন।

ফন্ট ফরমেটে : সবশেষে আপনার নিজের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো একটা সুন্দর আধুনিক সিভি ফরমেটে সাজিয়ে নিন। সহজ ও প্রচলিত ফরমেট বেছে নিবেন। যতটা সম্ভব পয়েন্ট আকারে লিখবেন। হিস্ট্রি লেখার মতো লম্বা প্যারা করে গাদাগাদি ইনফরমেশন দিলে তা পড়ার আগ্রহ থাকে না। প্রচলিত এবং মার্জিত ফন্ট ব্যবহার করবেন। সাদা ব্যকগ্রাউন্ডে কালো লেটার দিয়ে লিখবেন। প্রয়োজনে বোল্ড ও হাইলাইট করবেন ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে। তবে অন্য কোন কালির ব্যবহার করবেন না। সিভিতে প্রাসঙ্গিক তথ্যের বাইরে অন্যকোন অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ভারি বানাবেন না। এজন্য নিজে একাধিক বার পড়ে দেখার পাশাপাশি অভিজ্ঞ অন্য কাউকে দিয়ে রিচেক করিয়ে নিবেন।

সিভি যদি মেইল করতে হয় তো নিজের নামের সাথে স্ল্যাশ বা আন্ডারস্কোর দিয়ে সিভি কথাটা উল্লেখ করে ফাইল বানান। যেন দেখলেই বোঝা যায় কেউ একজন সিভি পাঠিয়েছে।

কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো। যদি না থাকে, তাতে থেমে যাবার কিছু নেই। কাজ করতে আগ্রহী, এটাও যথেষ্ট। সিভিতে বা কর্মকর্তার কাছে অবলীলায় এবং কম কথাতে যত সুন্দর করে আপনি কাজ করতে আগ্রহী বোঝাতে পারবেন সেটাই আপনার দক্ষতা। নিজের মনোভাব ছোট করবেন না। আর ভুল করাকে বা না জানাকে দুর্বলতা ভাববেন না। নিজের আত্মবিশ্বাস ঠিক রেখে নিজের অবস্থান জানার চেষ্টা করুন। অবশ্যই এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবেন।

Views 310 times